Friday, November 13, 2020

মিউন কণার স্থায়িত্ব রহস্য ও আপেক্ষিকতা--from Facebook

 কসমিক রশ্নি যখন বায়ুমন্ডলের ভেতর দিয়ে পৃথিবীর দিকে অগ্রসর হয় তখন তা বায়ুমন্ডলের কণাসমূহের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে বিভিন্ন ধরনের অবপারমানবিক কণা উৎপন্ন করে,যার মধ্যে 'মিউন(μ)' একটি।1936 সালে কসমিক রশ্নি পরীক্ষা করতে গিয়ে কার্ল এন্ডারসন(Carl D. Anderson) এবং সেথ নেদারমেয়ার(Seth Neddermeyer) মিউন আবিষ্কার করেন।এটি অত্যন্ত দ্রুত গতির(প্রায় আলোর বেগের সমান 0.9999c) ক্ষনস্থায়ী একটি কণা যার ভর 105.7 MeV/c2 বা 1.883531627 x 10⁻²⁸ kg.যা কিনা নিউট্রিনো ও ইলেক্ট্রনের চেয়ে বেশি(ইলেক্ট্রনের ভরের প্রায় 207 গুণ) কিন্তু অন্য সকল বস্তু কণা সমূহের চেয়ে কম।এর গড় জীবনকাল (2.1969811±0.0000022) μs বা প্রায় 2 × 10⁻⁶ s যা আমাদের চোখের পলক ফেলার যে সময় তার চেয়ে 2200 গুণ কম।অথবা বলা যায়,যদি একটি মিউন কণা ক্ষয় শুরু হওয়া ও বন্দুক থেকে গুলি ফায়ার করার সময় একই হয় তবে বন্দুকের নল থেকে ওই গুলি বের হওয়ার যে সময় তার চেয়েও অনেক কম সময় মিউনের জীবনকাল।এ সময়ের মধ্যেই এটি অন্যান্য কণায় ক্ষয় হয়ে যায়।এটি দূর্বল মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষয় হয়।মিউন হচ্ছে ঋণাত্মক চার্জিত কণা যা ক্ষয় হয়ে একটি ইলেকট্রন একটি এন্টি ইলেক্ট্রন নিউট্রিনো ও একটি মিউন নিউট্রিনো উৎপন্ন করে।মিউন ক্ষয়ের প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপ,

μ⁻ → e⁻ + ν'ₑ + ν(μ)
এখানে,
ν'ₑ = এন্টি ইলেক্ট্রন নিউট্রিনো
ν(μ)= মিউ নিউট্রিনো
চিত্রঃ মিউন ক্ষয়ের ফাইনম্যান ডায়াগ্রাম।
মিউন কণা প্রথমে একটি মিউ
নিউট্রিনো ও ডব্লিউ মাইনাস বোসন
উৎপন্ন করে।পরে এই ডব্লিউ বোসন খুব
অল্প সময়ের মধ্যে ভেংগে একটি এন্টি
ইলেক্ট্রন নিউট্রিনো ও একটি ইলেকট্রন
উৎপন্ন করে।
বেশিরভাগ মিউন কণাই ভূপৃষ্ঠ হতে মোটামুটি 10km উপরে সৃষ্টি হয় এবং অনেক মিউন পৃথিবী পৃষ্ঠে পতিত হয়।কিন্তু মিউনের যে গড় জীবনকাল তাতে এটি সর্বোচ্চ পথ অতিক্রম করতে পারবে প্রায়,
0.9999c × 2 × 10⁻⁶ s = 0.6 km.........(1)
এরপর এটি ক্ষয় হয়ে অন্যান্য কণায় রূপান্তরিত হয়ে যায়।তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে যেখানে মিউন সর্বোচ্চ পথ অতিক্রম করতে পারে 0.6 km সেখানে এটি পৃথিবী পৃষ্ঠে আসতে 10km পথ পাড়ি দেয় কিভাবে? রহস্যটা আছে মিউনের গতিবেগে।আগেই বলেছি মিউনের বেগ প্রায় আলোর বেগের সমান।কাজেই আমাদের আপেক্ষিকতার সূত্র ব্যবহার করতে হবে,এবং কোন ফ্রেমের সাপেক্ষে হিসাব করছি সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
1. আমাদের ফ্রেম(পৃথিবী হতে মাপন)
2. মিউনের ফ্রেম(মিউন নিজে কীভাবে
দেখছে ব্যাপারটা)।
1. মিউনের সাপেক্ষে তার জীবনকাল ∆t₀ = 2 × 10⁻⁶ s এবং এ সময়ে সে সর্বোচ্চ পথ অতিক্রম করতে পারে 0.6 km। কিন্তু পৃথিবীর কোন পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে মিউনের জীবনকাল হবে,
∆t= ∆t₀γ
যেখানে,
γ = 1/√[1-(v/c)²]
মিউনের ক্ষেত্রে,
γ = 1/√[1-(0.9999c/c)²]
= 1/√[1-(0.9999)²]
= 70.712 ~ 70..........(2)
কাজেই,
∆t = ∆t₀γ ~ 70∆t₀
অর্থাৎ পৃথিবী থেকে মাপলে মিউনের জীবনকাল প্রায় 70 গুন বেশি হবে।এবার দেখা যাক এই 70 গুন বেশি সময় নিয়ে মিউনটি কতটুকু দুরত্ব অতিক্রম করতে পারে।যদি এই মান 10km বা তার বেশি হয় তবে তা অবশ্যই পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারবে আর যদি কম হয় তাহলে পৌঁছাতে পারবেনা।পৃথিবীর সাপেক্ষে অতিক্রান্ত দূরত্ব,
0.9999c × 70∆t₀
= 0.9999c × 70 × 2 × 10⁻⁶ s
= 42km > 10km............(3)
এই হলো রহস্য।এখন মিউন সর্বোচ্চ 42km পর্যন্ত পথ অতিক্রম করতে পারবে।কিন্তু পৃথিবীতে আসতে তার অতিক্রম করতে হয় 10km পথ।কাজেই সে পৃথিবীতে সহজেই পৌঁছাতে পারবে।
2. এবার দেখা যাক মিউনের তার নিজের কাছে ব্যাপারটা কেমন। যেহেতু মিউন প্রায় আলোর বেগে 0.9999c পৃথিবীর দিকে ধাবিত হয় কাজেই, যাকে আমরা 10km দূরত্ব বলছি তা মিউনের জন্য 10km হবেনা।কত হয় দেখা যাক।আপেক্ষিক তত্ত্বানুসারে,
∆y = ∆y₀/γ
= 10km/70
= 0.142 km
অর্থাৎ যে দূরত্ব আমাদের ফ্রেমের(পৃথিবী) সাপেক্ষে 10km তা মিউনের কাছে 0.142 km. কিন্তু আমরা আগেই হিসাব করেছি মিউনের যে জীবনকাল,তাতে সে সর্বোচ্চ 0.6km পর্যন্ত পথ অতিক্রম করতে পারবে,সমীঃ(1) এরপর ক্ষয়িত হবে।অথচ পৃথিবীর ফ্রেমে 10km দূরত্ব অতিক্রম করতে সে তার ফ্রেমে যাচ্ছে মাত্র 0.142 km।তাহলে সে তার ফ্রেমে আরো (0.6-0.142)= 0.46km পথ যেতে পারবে।যেটা পৃথিবীর ফ্রেমের সাপেক্ষে 70 × 0.46km = ~32 km। অর্থাৎ মিউনটি যদি পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে 10km না হয়ে আরো 32km উপর মোট (32+10) km = 42km উপর হতেও আসত তাহলেও মিউনটি পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারত,যা কিনা আমরা আগেই হিসাব করে পেয়েছিলাম,সমীঃ(3)।মিউনের এই দীর্ঘ জীবনকালের রহস্যের সমাধান বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সঠিকতার একটি জোরালো প্রমাণ।মিউনকে পর্যবেক্ষন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।কেননা মিউন গবেষণা থেকে প্রকৃতির লুকায়িত প্রতিসাম্য, নতুন কণার সন্ধান,প্রকৃতিতে অন্য কোন অবপারমানবিক বলের অস্তিত্ব আছে কিনা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য আহরণ করা যায়।
No photo description available.
17

Share:

0 comments:

Post a Comment

Search This Blog

Powered by Blogger.

Blog Archive

Labels

Principles of Gamma-ray Spectroscopy and Applications in Nuclear Forensics

  (this article taken from link : https://archive.cnx.org/contents/686b9c8b-1656-49ec-a969-84da62a60eca@1/principles-of-gamma-ray-spectr...

Recent Posts

Unordered List

Theme Support